সুন্দর ও উজ্জ্বল ত্বক সবারই কাম্য। কিন্তু রাতারাতি ত্বককে পরিপূর্ণভাবে সুন্দর করে তোলার কোনো জাদুকরী উপায় নেই। নিয়মিত যত্ন ও সঠিক রুটিন মেনে চললেই কেবল ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখা সম্ভব।
তবে বাজারে অসংখ্য স্কিনকেয়ার পণ্য এবং নানা রকম পরামর্শের ভিড়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। নিজের ত্বকের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী সঠিক পণ্য বাছাই করা বা রুটিন তৈরি করাটাও সহজ কাজ নয়।
এজন্য আমরা কথা বলেছি তিনজন ভারতীয় ত্বক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তারা তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে ত্বকের যত্নের কিছু কার্যকরী টিপস শেয়ার করেছেন, যা আপনার স্কিনকেয়ার রুটিনকে আরও সহজ করে তুলবে।

১. ডা. জয়শ্রী শরদ – কসমেটিক ডার্মাটোলজিস্ট ও ফাউন্ডার, স্কিনফিনিটি এস্থেটিক স্কিন অ্যান্ড লেজার ক্লিনিক
চুলের কন্ডিশনার ব্যবহারের পর ত্বক ভালো করে ধুয়ে ফেলুন
ডা. জয়শ্রী শরদের মতে, চুলের কিছু পণ্যে এমন উপাদান থাকে যা ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে কপাল, গলা বা পিঠে ব্রনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ব্যবহারের পর ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এই ছোট্ট অভ্যাস ব্রন ও অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
সুতি বালিশের কভারের বদলে সিল্ক ব্যবহার করুন
অধিকাংশ মানুষ সুতির বালিশের কভার ব্যবহার করেন, যা ত্বক ও চুলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সুতির কভার ঘর্ষণের সৃষ্টি করে, যা ত্বকের জেল্লা কমিয়ে দেয় এবং চুলের ক্ষতি করে। সিল্কের বালিশ কভার ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া সপ্তাহে অন্তত দুইবার বালিশের কভার পরিবর্তন করা উচিত।
সিরাম ব্যবহারে সতর্কতা
ত্বকে অতিরিক্ত সিরাম ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ত্বকের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী সিরাম বেছে নিন:
- শুষ্ক ত্বক: হাইলুরনিক অ্যাসিড ও নিয়াসিনামাইড
- তৈলাক্ত ত্বক: এএইচএ, বিএইচএ বা রেটিনল
- ব্রনপ্রবণ ত্বক: রেটিনল ও বিএইচএ
- হাইপারপিগমেন্টেশন: ভিটামিন সি, আলফা আরবুটিন, এএইচএ
- বলিরেখা দূর করতে: হাইলুরনিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি বা রেটিনল
দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ দুটি সিরাম ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
২. সন্ধ্যা শেখর – সেলিব্রেটি মেকআপ আর্টিস্ট
ফেসওয়াশের বদলে মিল্ক ক্লেনজার
সন্ধ্যা শেখরের মতে, ফেসওয়াশের চেয়ে মিল্ক ক্লেনজার ত্বকের জন্য বেশি উপকারী। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা কমে যায়। মিল্ক ক্লেনজার নরম ও মৃদু হওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বককে কোমল রাখে।
পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব
প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্ধ্যা বলেন, “যখন আমি রাত ১০টায় ঘুমাই, তখন চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কম দেখা যায়। অন্যদিকে দেরি করে ঘুমালে ত্বকের সমস্যা বেড়ে যায়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “মানসিক চাপ ত্বকের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই আমি এখন স্কিনকেয়ার পণ্যের চেয়ে জীবনযাত্রার উন্নতিকে বেশি গুরুত্ব দিই।”
কম পণ্য, বেশি ফল
“আগে আমি ত্বকে অনেক পণ্য ব্যবহার করতাম, কিন্তু পরে বুঝতে পারি যে এতে স্কিন ব্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,” বলেন সন্ধ্যা। “এখন আমি মিনিমালিস্টিক স্কিনকেয়ার রুটিন ফলো করি। মডেল ও সেলিব্রেটিদের কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি, ত্বকে যত কম পণ্য ব্যবহার করা যায়, তত ভালো।”
৩. ডা. কিরণ শেঠী – মেডিকেল ডিরেক্টর, আইসিয়া এস্থেটিকস
সানস্ক্রিন ব্যবহার অত্যাবশ্যক
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্কিনকেয়ার রুটিন। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বকের অকালবার্ধক্য ও ক্ষতি রোধ করা যায়।
সকালে ভিটামিন সি, রাতে এএইচএ
ডা. কিরণ শেঠী সকালে ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ রাখে। রাতে এএইচএ সিরাম ব্যবহার করলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয় এবং ত্বক পরিষ্কার থাকে। তবে এই সিরাম ব্যবহার করলে প্রতিদিন সানপ্রটেকশন নিশ্চিত করতে হবে।
বয়স অনুযায়ী স্কিন ট্রিটমেন্ট
“বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের চাহিদা বদলে যায়,” বলেন ডা. কিরণ।
- ২০-এর দশকে: পিলস ব্যবহার করে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখা যায়।
- ৩০-এর দশকে: লেজার ফেসিয়াল ও কোলাজেন বুস্টিং ট্রিটমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।
- ৪০-এর পর: প্রফাইলো স্কিন বুস্টার বা পিআরপি মেসোথেরাপি ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়াতে সাহায্য করে।